Friday, June 6, 2014

শবেবরাত বরকতময় একটি রজনী

মহিমান্বিত এ রজনীতে ব্যাপকভাবে বান্দাদের ক্ষমা করা হয়:

 * হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রজনীতে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে তাশরিফ আনেন এবং আপন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী ও অন্যের সঙ্গে হিংসা পোষণকারীদের ছাড়া। (বাইহাকি, হাদিস : ৩৮২৭)

* হজরত মু'আজ ইবনে জাবাল (রা.)
থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬০)

* আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মধ্য শাবান রাতে মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং দুই ধরনের লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তারা হলো হিংসুক ও অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৬৫০)

এ রাতে হায়াত-মউত ও পুরো বছরের রিজিকের ফায়সালা হয়

* হজরত আয়েশা (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, শবেবরাতে কী ঘটে এ সম্পর্কে হজরত আয়শা (রা.) জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রাতের কার্যক্রম হলো, এ বছর যত (সন্তান) জন্মগ্রহণ করবে, তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ বছর যত (লোক) ইন্তিকাল করবে তা লেখা হয়। আর এ রাতেই বান্দাদের (সারা বছরের) কার্যাবলি (আসমানে) উঠানো হয় আর এ রাতেই নির্ধারিত রিজিক অবতীর্ণ হয়। তারপর হজরত আয়েশা (রা.) জানতে চাইলেন যে ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর রহমত ও করুণা ছাড়া কেউ কি বেহেশতে যেতে পারবে? রাসুল (সা.) তিনবার বলেন, কখনো পারবে না। আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করেন, হুজুর! আপনিও না? জবাবে বললেন, আমিও একমাত্র তাঁর দয়া ও রহমত ছাড়া জান্নাতে যেতে পারব না। (মিশকাত -পৃ. ১১৫)

* যখন শাবানের পঞ্চদশ রজনী আসে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে মালাকুল মউতকে একটা তালিকা দেওয়া হয় এবং হুকুম করা হয়, এই তালিকায় যেসব মানুষের নাম লিপিবদ্ধ আছে তাদের প্রাণ হরণ করো। কোনো বান্দা বাগিচায় গাছপালা লাগাচ্ছে, কেউ বিবাহ করছে, কেউবা নির্মাণ কাজে ব্যস্ত, অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লেখা হয়ে গেছে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, খণ্ড. ৪, পৃ. ৩১৭)

 অগণিত মুসলমানকে ক্ষমা করা হয় এ রাতে

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ শাবানের পনেরতম রজনীতে প্রথম আসমানে শুভাগমন করেন এবং কালব গোত্রের বকরিগুলোর পশম পরিমাণ মানুষকে ক্ষমা ও মাগফিরাত করে দেন। (তিরমিজি)

সূর্যাস্ত থেকে সকাল পর্যন্ত পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা

* হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন শাবানের পঞ্চদশ রজনী আগত হয়, তখন রাতে নামাজ পড়ো এবং পরদিন রোজা রাখো। কেননা সূর্যাস্তের সময় থেকে সুবহে সাদিক (ফজর) উদিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবস্থান করেন এবং এ আহ্বান করতে থাকেন- আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি কোনো রিজিক যাচনাকারী? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেব। আছে কি কোনো এমন কেউ, এমন কেউ? ইত্যাদি। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)

শবেবরাতে রাত জাগার ফজিলত
* এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাতে জেগে থাকবে, তাঁর জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। ১. যিলহজ্জের অষ্টম রাত ২. যিলহজ্জের নবম রাত ৩. ঈদুল আজহার রাত ৪. ঈদুল ফিতরের রাত ৫. শাবানের পঞ্চদশ রাত।

* হজরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, পাঁচটি রাতে দোয়া করা হলে তা কখনো ফেরত দেওয়া হয় না (অবশ্যই কবুল হয়) জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের পঞ্চদশ রাত এবং দুই ঈদের রাত।
মাহে শাবান ও শাবানের পঞ্চদশ দিনে রোজা রাখার গুরুত্ব
* হজরত আব্দুল্লাহ বিন কায়েস (রহ.) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে নফল রোজার জন্য অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাস ছিল অত্যন্ত প্রিয়। এরপর তিনি শাবানের রোজাকে রমজানের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়াকে আরো বেশি পছন্দ করতেন। (আবু দাউদ)
* হজরত উসামাহ বিন যায়েদ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, হজরত উসামাহ (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি আপনাকে রমজান ছাড়া এ পরিমাণ রোজা রাখতে অন্য কোনো মাসে দেখিনি যে পরিমাণ শাবান মাসে রাখেন। জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী একটি মাস, যে মাসের ফজিলত থেকে মানুষ বঞ্চিত থাকে। অথচ এ মাসে মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি রোজা অবস্থায় আমার আমল পেশ করাকে পছন্দ করি বিধায় রোজা রাখছি। (নাসাঈ)
উপরোল্লিখিত হাদিসগুলো ছাড়াও বহু হাদিসে শবেবরাতের ফজিলত ও ওই রজনীতে নফল ইবাদতের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো থেকে এই রাতে নিম্নোক্ত আমলগুলো প্রতীয়মান হয়।
* রাত জেগে বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।
* দীর্ঘ সিজদার মাধ্যমে মহান প্রভুকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা।
* বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা।
* কবরস্থানে গিয়ে জিয়ারত করা।
* ১৫ শাবানের রোজা রাখা।

No comments:

Post a Comment