AL- HADITH

জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্ন শাস্তি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন: কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে নিম্ন শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির, শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দুটি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।
               ( বুখারী: ৬৫৬২ ও মুসলিম: ২১৩ )

 

গুনাহ ঠিক এভাবে ঝরে পড়ে

হযরত আবু যর (রাঃ ) থেকে বর্ণিত, একবার শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যাচ্ছিল। এমন সময় নবী করীম (দ:) ঘরের বাহিরে এলেন এবং একটি গাছের দু'টি শাখা ধরে ঝাঁকি দিলেন। তখন ঝরঝর করে গাছের শুকনো পাতা পড়তে লাগলো। নবী করীম (দ:) বললেনঃ 

"হে আবু যর (রাঃ) ! যখন কোন মু'মিন বান্দা একনিষ্ঠভাবে আন্তরিকতার সাথে নামায পড়ে, তখন তার গুনাহ ঠিক এভাবে ঝরে পড়ে, যেমন এ গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়েছে।" (মুসনাদে আহমাদ)

 

সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ 

 হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) বলেছেন, “সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।”

[সহীহ বুখারী ২১০১, ৫৫৩৪; সহীহ মুসলিম ২৬২৮; মুসনাদে আহমাদ ১৯১২৭, ১৯১৬৩]

 

দুটো চোখকে (জাহান্নামের ) আগুন কখনো স্পর্শ করবেনা

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দুটো চোখকে (জাহান্নামের ) আগুন
কখনো স্পর্শ করবেনা-
• এমন চোখ যা আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে।
• এমন চোখ যা নিদ্রাহীনভাবে রাতে আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়েছে।
                                             
                                         { সুনান তিরিমিযী, হাদীস নং-১৬৩৯}

 

জাহান্নামে যাওয়া অসম্ভব

''যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া অসম্ভব, যেমন গাভীর বাট থেকে দুধ বের হওয়ার পর পুনরায় ভিতরে ঢুকানো অসম্ভব। ''

                                          [তিরমিযী, মিশকাত ,হাদীস-৩৮২৮]

 

দরূদ -পাঠের ফযীলত

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপরে দশটি রহমতনাযিল করেন। তার আমলনামা হ’তে দশটি গুনাহ ঝরে পড়ে ও তার সম্মানের স্তর আল্লাহর নিকটে দশগুণ বৃদ্ধি পায়’।                                                   [নাসাঈ, মিশকাত /৯২২]

 

আমাদের প্রতি হযরত ইবরাহীম (আ:) এর সালাম:

ইবনে মাসঊদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে রাতে আমাকে ভ্রমণ করানো হল (মিরাজের রাত্রিতে) সে রাতে ইবরাহীম (আ:) সাথে আমার সাক্ষাত হল। তিনি বল্লেন,
হে নবী, আমার পক্ষ থেকে আপনার উম্মতকে সালাম জানিয়ো দিবেন।
এবং তাদেরকে এ সংবাদ প্রদান করুন যে, জান্নাতের মাটি হবে উর্বর, পানি হবে মিষ্ট এবং তা হবে লেকবিশিষ্ট। আর তার বপন হল ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’। ( তিরমিযী : ৩৪৬২ )


ফজর ও আসরের সময়ে ফেরেশতাদের পালা বদল হয়

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের নিকট পালাক্রমে একদল ফিরিশতা আসে রাতে। অপর দল আসে দিনে। তারা একত্রিত হয় ফজর ও আসরের নামাজের সময়। অত:পর যে দল তোমাদের
মধ্যে রাতে অবস্থান করেছিলো তারা যখন আল্লাহর দরবারে হাজির হবার জন্যে উপরে চলে যায় তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় রেখে এলে। অথচ তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অধিক অবগত। ফিরিশতাগণ উত্তরে বলেন, আমরা তাদেরকে নামাজ আদায়রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি এবং গিয়েও নামাজরত অবস্থায় দেখতে পেয়েছি।” {বুখারী, মুসলিম-৭৪৭৯}

 

যিলহজের প্রথম দশকে নেক আমলের ফযীলত

ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যার আমল যিলহজ মাসের এই দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হল এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফেরত এলো না (তার কথা ভিন্ন)।’ [বুখারী : ৯৬৯; আবূ দাউদ : ২৪৪০; তিরমিযী : ৭৫৭]

 

 কে সর্বোত্তম মুসলমান?

হযরত আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মুসলমানদের মধ্যে কে সর্বোত্তম মুসলমান? তিনি বললেনঃ “যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে সেই সর্বোত্তম মুসলমান”। (বুখারী ও মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন-১৫১২)

 

সাতটি চরিত্র মানুষকে ধ্বংস করে দেয়

 হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এরশাদ করেন, ধ্বংসকারী সাতটি কাজ হতে তোমরা বিরত থাক। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সেগুলো কি কি? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এরশাদ করলেন, 

১. মহান আল্লাহর সাথে শিরক করা অর্থাৎ,সত্তাগতভাবে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা, 

২.যাদু করা, 

৩.অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, তবে শরীয়ত মোতাবেক হত্যা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার নিরিখে বৈধ, 

৪.সুদ খাওয়া, 

৫.ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা,

 ৬.যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, 

৭.সতী-সাধ্বী ও উদাসীন মুসলিম নারীদের প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।  

[বুখারী ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মিশকাত শরীফ ১৭ পৃষ্ঠা]

 

মেয়েদের পায়ে নুপুর পড়া নিষিদ্ধ

একদিন হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নিকট, বাজনাদার নুপুর পরা কোন বালিকা আসলে আয়েশা (রাঃ) বলেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না।অতঃপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যে ঘরে ঘন্টি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। সুনানে আবু দাউদ-৪২৩১,

 

 যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আগমন করে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। তিনি বলেন,তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছুনেই। আমি পুনরায় তার নিকট এসে একই কথা বললাম। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ।মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৪৯;সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৮৯৩;সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪২৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৩০

 

 মাতাপিতার অবাধ্যতা

হযরত আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন-প্রত্যেক পাপ আল্লাহ তায়ালা যতটুকু ইচ্ছে ক্ষমা করে দেন, কিন্তু মাতাপিতার অবাধ্যতা ক্ষমা করবেন না। বরং আল্লাহ তায়ালা এটার শাস্তি দুনিয়াতেই তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে প্রদান করে। (মেশকাত- ৪৭২৬)

   

দোয়া ব্যতীত আর কিছুই ভাগ্যকে পরিবর্তন করেনা 

হযরত ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন-দোয়া ব্যতীত আর কিছুই ভাগ্যকে পরিবর্তন করে না, পূর্ণ ব্যতীত আর কিছুই আয়ুকে বাড়াইনা এবং কৃত পাপ ব্যতীত আর কিছুই মানুষকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করেনা। (মেশকাত ৪৭০৬ ও ইবনে মাজাহ)

 

আল্লাহ যার প্রতি অনুগ্রহ করেনা

 হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করেনা, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেনা। (বুখারী ও মুসলীম, মেশকাত- ৪৭২৮)


  

সাহাবীদের শান

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,’’তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালমন্দ করিও না, অপবাদ দিও না। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম(আল্লাহর কসম) ! তোমাদেরমধ্যে কোন ব্যক্তি যদি উহুদ পাহাড়ের সমান স্বর্ণও দান করে, তারপরও সওয়াবের দিক দিয়ে আমার প্রিয় সাহাবীদের একমুট বা অর্ধমুটের সমান হবে না’’     (আল হাদিস (সহীহ মুসলিম শরীফ:৬২৫৮)

 

 সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা হবে সব নবী জানেন

হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দন্ডায়মান হলেন অতঃপর সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথা বেহেশতবাসীরা বেহেশতে এবং দোযখবাসীরা দোযকে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সামনে বলে দিলেন । আমাদের মধ্যে যারা মূখস্থ রাখতে পেরেছে তারা মুখস্থ রেখেছে; আর যারা ভূলে যাবার তারা ভূলে গেছে ।
[সহীহ বুখারী শরীফঃ কিতাবু বাদয়িল খালক্ব, হাদীস নং- ৩০২০]

 

 

আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক ঘৃণিত ব্যক্তি

আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌র নিকট ঐ ব্যক্তি সর্বাধিক ঘৃণিত যে অত্যন্ত ঝগড়াটে।
[বুখারী, ২৪৫৭]

 পরম করুণাময় আল্লাহপাকের ভালবাসা পাওয়ার উপায়

 আবুল আব্বাস সাহল বিন সা'দ আস্-সা'ইদী রাদিয়াল্লাহু 'আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:

"এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা করলে আল্লাহ্ আমাকে ভালবাসেন, লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।

তখন তিনি বললেন: দুনিয়ার প্রতি অনুরাগী হবে না, তাহলে আল্লাহ্ তোমাকে ভালবাসবেন; আর মানুষের কাছে যা আছে তার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালবাসবে।"

[ইবনে মাজাহ্: ৪১০২]

   

  

গোনাহ্ যদি আকাশ সমানও হয়ে যায় 


আনাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন: হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) চাইবে, তুমি যা করেছ তা আমি ক্ষমা করে দেব- আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ্ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী প্রমাণ গোনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে দেখা কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করবো।


[তিরমিযী (নং-৩৫৪০) এ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]

 

পছন্দনীয় এ অপছন্দনী স্বপ্ন ।

আবু সা'ঈদ খুদরী [রা:] থেকে বণির্ত তিনি রাসুলুল্লাহ [সা:]কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা কেউ পছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, সুতরাং সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে এবং প্রিয়জনদের কাছে বলে অপর বণর্নায় আছে সে যেন প্রিয়জন ছাড়া করো কাছে না বলে আর অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে, সুতরাং সে যেন তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রথর্না করে এবং কারো কাছে না বলে তাহলে তা তার কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না । [বুখারী-৬৯৮৫]



কর্মের ফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল ।


আমীরুল মু’মিনীন আবূ হাফস উমার বিন খাত্তাব (রা:) থেকে বর্ণিত । তিনি 

বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ (সা:) কে বলতে 

শুনেছি যে, সকল কাজের পরিণাম নিয়ত অনুযায়ী হবে । প্রত্যেক ব্যক্তি যে 

নিয়ত নিয়ে কাজ করবে সে তাই 

পাবে । সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়েছে, 

তার হিজরত আল্লাহর ও তাঁর রাসুলের 

সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়েছে বলেই ধরা হবে । পক্ষান্তরে যার হিজরত দুনিয়া লাভ 

বা  কোন মেয়েকে বিয়ে করার নিয়তে 

হয়েছে তার হিজরত উক্ত উদ্দেশ্যে হয়েছে বলেই পরিগণিত হবে । 

[ বুখারী-৬৬৮৯. মুসলিম-১৯০৭ ]

আবু হুরাইরা আবদুর রাহমান বিন শাখর (রা:) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: মহান আল্লাহ 

তোমাদের শরীর এবং আকৃতির দিকে দেখেন না, বরং তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে দেখেন । [ মুসলিম-২৫৬৪ ]







মানুষের মৃত্যূর পর তিন ধরণের নেক আমল জারি থাকে ।

আবু হুরাইয়রা [রা:] থেকে বণির্ত । তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ [সা:] বলেছেন- 

যখন মানূষ মারা যায়, তখন তিনটি বিষয় 

ছাড়া তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় । ১. সাদাকা জারিয়া ২. এমন ইলম যা 

উপকার পাওয়া যায় ৩. নেক সন্তান যে 

তার জন্য দোয়া করে । [মুসলিম-১৬৩১]







নামাজে কাতার সোজা করা এবং ফাঁক না রেখে দাঁড়ানো ।

জাবির বিন সামুরা [রা:] থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ [সা:] আমাদের কাছে এসে বলেলেন: ফেরেশতা মন্ডলী যেমন তাদের প্রভুর সামনে কাতারবদ্ধ হয় তোমরা কি তেমন কাতারবদ্ধ হবে না ? আমরা জিজ্ঞাসা করলাম: হে আল্লাহর রাসুল ! ফেরেশতা মন্ডলী তাদের প্রভুর সামনে কিভাবে কাতারবদ্ধ হয় ? তিনি বললেন: তারা আগের কাতারগুলো পূর্ণ করে এবং মাঝখানে ফাঁক না রেখে মিলিতভাবে দাড়ায় । [মুসলিম-৪৩০]




পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম ।

আবু বাকারা নুফা'ই বিন হারেস [রা:] থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ [সা:] বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক গুনাহ সম্পর্কে বলব না ? এ কথাটা তিনি তিনবার বললেন । আমরা বললাম অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসুল ! তিনি বললেন : আল্লাহর সাথে শিরক করা । পিতা-মাতার আবাধ্যতা । তিনি হেলান দিয়ে ছিলেন । অত:পর সোজা হয়ে বসে বললেন: সাবধান ! মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ।  এ কথাটি তিনি বার বার বলতে ছিলেন, এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আহা যদি তিনি থেমে যেতেন । [বুখারী ও মুসলিম]

জাহান্নামের সবচেয়ে লঘু শাস্তি

وعن النعمان بن بشير رضي الله عنهما ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم، 
 
يقول : (( إنَّ أهْوَنَ أهْلِ النَّارِ عَذَاباً يَوْمَ القِيَامَةِ لَرَجُلٌ يوضعُ في أخْمَصِ قَدَمَيْهِ جَمْرَتَانِ

 يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ . مَا يَرَى أنَّ أَحَداً أشَدُّ مِنْهُ عَذَاباً ، وَأنَّهُ لأَهْوَنُهُمْ عَذَاباً )) مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

নুমান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।
_____________________________

[أخرجه : البخاري 8/144 ( 6562 ) ، ومسلم 1/135 ( 213 ) ( 363 )و( 364 )]
[বুখারী: 8/144 ( ৬৫৬২ ), মুসলিম: 1/135 ( ২১৩ ) ( 363 ) ও ( 364 )]





ফিৎনাগুলো বড়, ছোট ও গ্রীষ্মের হাওয়ার ন্যায় হবে

  عن حذيفة رضي الله عنه  قال قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَعُدُّ الْفِتَنَ مِنْهُنَّ 

ثَلَاثٌ لَا يَكَدْنَ يَذَرْنَ شَيْئًا وَمِنْهُنَّ فِتَنٌ كَرِيَاحِ الصَّيْفِ مِنْهَا صِغَارٌ وَمِنْهَا كِبَارٌ . [رواه 

مسلم: رقم الحديث من مكتبة الشاملة (5146)]

 

হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিৎনার কথা বলতে গিয়ে বললেন: তিনটি ফিৎনা এমন যা সব কিছুতেই পতিত হবে, এর মধ্যে কিছু আছে যা গ্রীষ্মের হাওয়ার ন্যায় হবে, যার মধ্যে কিছু বড় বড় হবে আবার কিছু ছোট ছোট হবে।
[মুসলিম: কিতাবুল ফিতান ওয়াআশরাতুস্ সায়া, মাকতাবাতুস শামেলাহ্ থেকে হাদীস নং- ৫১৪৬]




প্রত্যেককেই নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে

   وعن ابن عمر رضي الله عنهما ، قَالَ : سمعت رَسُول الله،    يقول: (( كُلُّكُمْ رَاعٍ ، 

 وَكُلُّكُمْ مسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ : الإمَامُ رَاعٍ وَمَسْؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ، والرَّجُلُ رَاعٍ في أهْلِهِ

 وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ، وَالمَرْأةُ رَاعِيَةٌ في بيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا ، وَالخَادِمُ 

رَاعٍ في مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ )) مُتَّفَقٌ عَلَيهِ 

[رواه البخاري: 7/41 ( 5200 ) ، ومسلم 6/7 ( 1829 ) ( 20 )].

 

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষণাবেক্ষণকারী(বা দায়িত্বশীল) এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরুষ তার পরিবার ও সংসারের জন্য দায়িত্বশীল এবং তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রীলোক তার স্বামীর ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারিনী এবং তাকে সে সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। খাদেম তার মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তাকে তার সে দায়িত্বপালন সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।” [বুখারী: ৭/৪১(৫২০০) ও মুসলিম: ৬/৭(১৮২৯)]



দুনিয়াতে অপরিচিত বা ভ্রমণকারী মুসাফিরের মত হয়ে যাও

عَنْ ابْن عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بِمَنْكِبِي، وَقَالَ: “
 كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّك غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ”. وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُولُ: إذَا 

أَمْسَيْتَ فَلَا تَنْتَظِرْ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرْ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِك لِمَرَضِك، 

وَمِنْ حَيَاتِك لِمَوْتِك.
 

[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ رقم:6416]
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধ ধরে বললেন:
দুনিয়াতে অপরিচিত অথবা ভ্রমণকারী মুসাফিরের মত হয়ে যাও।
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলতেন, সন্ধ্যা বেলা যখন তোমার সাধ্য হবে, তখন সকালের অপেক্ষা করো না। আর সকাল আসলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। অসুস্থতার পূর্বে সূস্থতার মূল্য অনুধাবন কর, আর মৃত্যুর জন্য জীবিত অবস্থায় সংগ্রহ করে নাও।
[বুখারী: ৬৪১৬]





শির্কমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রতিদান

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: “يَا ابْنَ آدَمَ! إِنَّكَ مَا دَعَوْتنِي وَرَجَوْتنِي غَفَرْتُ لَك عَلَى مَا كَانَ مِنْك وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ! لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُك عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتنِي غَفَرْتُ لَك، يَا ابْنَ آدَمَ! إنَّك لَوْ أتَيْتنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُك بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً” .

[رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ ، رقم: 3540، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ].
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) চাইবে, তুমি যা করেছ তা আমি ক্ষমা করে দেব- আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ্ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী প্রমাণ গোনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে দেখা কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করবো।
[তিরমিযী (নং-৩৫৪০) এ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]

হাশরের ময়দানের ৫টি প্রশ্ন!

 عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الْأَسْلَمِيِّ قَالَ


قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ 

 فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَ فَعَلَ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَ أَبْلَاهُ

[رواه الترمذي: 2417، وقَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ]


আবূ বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আসলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কিয়ামতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দাহ তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ তার জীবনকাল কিরূপে অতিবাহিত করেছে, তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে এবং কিসে খরচ করেছে এবং তার শরীর কিভাবে পুরানো করেছে?”
[ইমাম তিরমিযী এ হাদীস(নং-২৪১৭) বর্ণনা করে বলেন, হাদীস টি হাসান ও সহীহ।]





রোযাদারকে ইফতার করালে রোযার সমান সওয়াব

عن زَيدِ بنِ خالدٍ الجُهَنيِّ قَالَ:

 
- قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “مَنْ فَطَّرَ صَائِماً كَانَ لَهُ مِثلَ أَجرِهِ غَيرَ أَنَّهُ لا 

يَنقُصُ من أَجرِ الصَّائِمِ شيئاً”.


 رواه الترمذي: 3/171 رقم: 807، قَالَ أَبُو عِيسَى: هَذَا حديثٌ حسنٌ صحيحٌ.

 

যায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“যে ব্যক্তি রোযাদারকে ইফতার করাবে সে রোযাদারের সমান সওয়াব পাবে এবং রোযাদারের সওয়াবও কোন ক্ষেত্রে কম হবে না।”

[তিরমিযী: ৩/১৭১, নং- ৮০৭, আবূ ঈসা বলেন হাদীসটি হাসান সহীহ্।]

1 comment:

  1. অসাধারণ মহান আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন - আমীন

    ReplyDelete