Friday, May 23, 2014

মি’রাজ রজনী ও আল্লাহর সাক্ষাৎ

আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মি’রাজের রজনীতে স্বীয় দীদারে আনওয়ার (নূরাণী সাক্ষাৎ) দ্বারা সম্মানিত করেছেন। যে দীদারের বর্ণনা কুরআনে করীমে এইভাবে হয়েছে  -
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى
তিনি যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা তাঁর অন্তর মিথ্যা প্রতিপন্ন করে নি । 
                                                        (সুরা নাজম,আয়াত-১১)

আরও ইরশাদ হচ্ছে -

لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى
নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর রবের মহান নিদর্শনাবলি প্রত্যক্ষ করেছেন ।
                                                            (সুরা নাজম,আয়াত-১৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিরাজের রজনীতে আসমানসমূহ, বেহেশত-দোযখ,সিদরাতুল মুনতাহা এবং আরশে ইলাহীর ভ্রমণ করিয়েছেন । আর আল্লাহ তা’আলা যতদূর চেয়েছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততদূর ভ্রমণ করেছেন । তাঁর সৃষ্টির মহান নিদর্শনাবলি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং মহিয়ান আল্লাহ তা’আলার বরকতময় দর্শনের মাধ্যমে সম্মানিত হয়েছেন ।
যেমনটি সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে এ সংক্রান্ত বর্ণনা সংকলিত হয়েছে । উক্ত হাদীসের এক অংশে বর্ণিত হয় -
حَتَّى جَاءَ سِدْرَةَ المُنْتَهَى، وَدَنَا لِلْجَبَّارِ رَبِّ العِزَّةِ، فَتَدَلَّى حَتَّى كَانَ مِنْهُ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
অবশেষে হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “সিদরাতুল মুনতাহায়” আগমন করলেন। এখানে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিকটবর্তী হলেন । অতি নিকটবর্তী হওয়ার ফলে তাঁদের উভয়ের মধ্যে দু’ধনুকের পরিমাণ ব্যবধান রইল অথবা আরও কম।
                  (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৫১৭/৭০৭৯)


সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হচ্ছে -
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ، قَالَ: قُلْتَ لِأَبِي ذرٍّ، لَوْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَسَأَلْتُهُ فَقَالَ: عَنْ أيِّ شيْءٍ كُنْتَ تَسْأَلُهُ؟ قَالَ:كُنْتُ أَسْأَلُهُ هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ قَالَ أَبُو ذَرٍّ: قَدْ سَأَلْتُ، فَقَالَ:رَأَيْتُ نُورًا
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত – তিনি বলেন, আমি হযরত আবু যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম,আমি যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হতাম তবে তাঁকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতাম । আবু যর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তুমি কোন বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে ? আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম, আপনি আপনার রবকে দেখেছেন কি ? আবু যর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি অবশ্যই এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি , তিনি ইরশাদ করেন, আমি দেখেছি আর তা নূর আর নূর ছিল ।
 ( সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমানহাদীস নং- ১৭৮/২৯২/২৬৭/৩৫২)

তিরমিযি শরীফে বর্ণিত হচ্ছে - 

হযরত ইকরামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নিশ্চয়ই সায়্যিদিনা মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেন । আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন নি যে, তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত।
তিনি (ইবনে আব্বাস রাঃ) বলেন, বিনাশ হোক ! এ অবস্থা হল তো তখনের যখন তিনি তাঁর আসল নূরে তাজাল্লী করেন । আর সায়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দু’বার দেখেছেন ।
                            ( সুনানে তিরমিযি,  হাদীস নং- ৩২৭৯)

আরও বর্ণিত হচ্ছে -

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) অবশ্যই দেখেছেন। (সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং- ৩২৮০)

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেন -

সায়্যিদিনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত – আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি আমার রব তা’আলাকে দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ,৪:৩৮০,৪:৩৫০, হাদীস-২৫৮০,২৬৩৪)

আল্লাহ তা’আলা আমাদের মি’রাজের ফয়জ দ্বারা ধন্য করুন এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে আলোকিত করুন । বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন ।

No comments:

Post a Comment