Sunday, April 26, 2015

হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি অাজমিরী(রাহঃ)'র সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম

সুলতান-উল-হিন্দ , খাজা মুইনুদ্দিন চিশতী(রাহঃ) ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি গরিবে নেওয়াজ নামেও পরিচিত। মইনুদ্দিন চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম চিশতিয়া ধারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেন। তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে
পরিচিত করেন পরবর্তীতে তার অনুসারীরা যেমন,কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী(রাহঃ), বাবা ফরিদ(রাহঃ),হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া(রাহঃ)সহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারা এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনঃ 

ধারনা করা হয়, খাজা মইনুদ্দিন চিশতী(রাহঃ) ৫৩৬ হিজরী/১১৪১ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পারস্যের সিসটান রাজ্যের চিশতীতে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি পারস্যে বেড়ে উঠেন। পনের বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিল) ও একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে, একদিন তিনি তার ফলবাগানে পানি দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি শেখ ইব্রাহিম কুন্দুজী(রাহঃ) (কুন্দুজী নামটি জন্মস্থান কুন্দুজ থেকে এসেছে)।. যুবক মইনুদ্দিন তটস্থ হয়ে যান এবং কুন্দুজীকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর প্রতিদানস্বরুপ হযরত কুন্দুজী মইনুদ্দিন চিশতিকে এক টুকরা রুটি দেন ও তা খেতে বলেন। এই পর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতরন করে দেন। এরপর তিনি বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে জ্ঞানার্জন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

ছুফি দীক্ষাঃ

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী(রাহঃ)বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিশতিয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ ছুফি সাধক খাজা উসমান হারুনী(রাহঃ)'র নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খেলাফত বা ছুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন।

ভ্রমণঃ

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য ছুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ইরাকের বাগদাদে আব্দুল কাদির জিলানী(রাহঃ)'র সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। একই সংবাদ নিজ পীর খাজা ওসমান হারুনীর সাথে মদীনায় অবস্থান ও জিয়ারতকালে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।

ধর্ম প্রচারঃ

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী(রাহঃ) ছিলেন পাক- ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক ছুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বীয় পীর উসমান হারুনী(রাহঃ)'র নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তারই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন।

খেলাফত প্রদানঃ

তিনি কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার খাকী(রাহঃ) সহ শতাধিক মুরিদানকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পন করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

 ইন্তেকালঃ

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী(রাহঃ) ৬৩৩ হিজরীর ৬ই রজব সূর্যোদয়ের সময় ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তাঁর বড় ছেলে হযরত খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী(রাহঃ) তাঁর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে তার সমাধিস্থলে বার্ষিক ওরছ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। যাতে নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে সমবেত হয়। অাল্লাহ অামাদেরকে উনার মাজার জিয়ারত করার তৌফিক দান করুক,অামিন।

No comments:

Post a Comment