Friday, July 25, 2014

মহিমান্বিত রজনী শবে কদর

লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রজনী। আর ‘ক্বদর’ শব্দের অর্থ হলো মহিমান্বিত। ফার্সিতে শবে ক্বদর বলা হয়।
পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখের একটি রাত, যে রাতের ইবাদত ৮৩৩ বছরের ইবাদাতের সমান।
একটা মানুষ যদি জীবনে সঠিকভাবে এমন একটি রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে রাজী করাতে পারে, তবে জীবনের প্রায় সবটুকু সময় ইবাদতের মাঝেই সে পার করলো।
ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ২৭ তারিখের রাতকে, অর্থাৎ, ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে পবিত্র ক্বদর রজনী হিসেবে অধিক সম্ভাব্য বলেছেন।উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এটা অনেক বড় নিয়ামত।যে নিয়ামত আজ আমাদের হাতছানি দিচ্ছে।স্বল্প সময়ের এ জীবনে আগামী বছর এ রাত পাবো কিনা তা কেবল আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে করিমের সূরা কদর-এ বলেন:


শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।(আয়াত,২-৩)
  • হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মধ্যবর্তী দশ দিন ই’তিকাফ করতেন। এক বছর এরূপ ইতিকাফ করেন। অতঃপর যখন একুশের রাত এলো, যে রাতের সকালে তিনি তাঁর ইতিকাফ হতে বের হবেন, তিনি বললেন: যারা আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশদিন ইতিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল কদর) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশ দিনে তালাশ করো এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ করো। পরে এই রাতে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হলো, মসজিদের ছাদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনির। ফলে মসজিদে টপটপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। একুশের রাতের সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কপালে কাদা- পানির চিহ্ন আমার দু’চোখ দেখতে পায়। (বুখারী ও মুসলিম)
  • হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
উম্মুল মু’মেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো। (বুখারী ও মুসলিম)
  • হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রমযানের শেষ দশ দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জেগে থাকতেন এবং নিজ পরিবারের সদস্যদের ঘুম থেকে জাগাতেন এবং তিনি নিজেও ইবাদতের জন্য জোর প্রস্তুতি নিতেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
“তোমরা আমার নিকট দুআ করো, আমি তোমাদের দুআ কবুল করবো।” এ রাত্রিতে আল্লাহ পাক বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন।
লাইলাতুল ক্বদর-এ অনেক আমলই করা যায়। তা হলো,নামায পড়া, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা, ছালাতুত তাসবীহ পড়া,
দুরূদ শরীফ পাঠ করা, যিকির-আযকার করা,তাহাজ্জুদের নামায পড়া, দুআ করা,বেশি বেশি কান্নাকাটি করে তওবা ইস্তিগফার করা, ইত্যাদি।

No comments:

Post a Comment